সবাই কেমন আছেন। আশা করি সবাই ভালো আছেন।আমিও অনেক ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের সাথে মূসা এর জীবন কাহীনি তুলে ধরবো।। সবাই একটী ধর্যো সহকারে পুরো জীবন কাহিনিটা পরুন ধন্যবাদ।। তো শুরু করা যাক Writing:::Mokles হযরত মূসা (আঃ) ইহুদি, খ্রিস্ট, ও ইসলাম ধর্মে স্বীকৃত একজন রাসুল বা প্রেরিত পুরুষ। তিনি অবশ্য মোজেস নামেও পরিচিত ছিলেন। পবিত্র কোরআনে মুসা (আঃ) এর নাম অন্য নবীদের তুলনায় অনেক বেশি উল্লেখ করা হয়েছে। ধারণা করা হয় মুসা (আঃ) আনুমানিক ১২০ বছর বেচে ছিলেন। হযরত মুসা (আঃ) যে সম্প্রদায়ে জন্ম নিয়েছিলেন সে সম্প্রদায়ের নাম বনী ইসরাঈল। তার মুজেযাসমূহ বিগত অন্যান্য নবী রসূলগণের তুলনায় যেমন সংখ্যায় বেশী তেমনিভাবে আবার প্রকাশের বলিষ্ঠতার দিক দিয়েও অধিক। এমনিভাবে তার সম্প্রদায় বনী ইসরাঈলের মূর্খতা এবং হঠকারিতাও বিগত উম্মত বা জাতিসমূহের তুলনায় বেশী কঠিন। সেইরকম এই কাহিনীর আলোচনা প্রসঙ্গে বহু জ্ঞাতব্য বিষয় এবং হুকুম আহকামের কথাও এসেছে।হিব্রু বাইবেল অনুসারে মুসা মিশরে লিবাইট নামের ইসরাইলি গোত্রে জন্মগ্রহন করেছিলেন । তার পিতার নাম আমরাম আর মায়ের নাম জোশিবেদ । তখন মিশরের সম্রাট ছিল ফেরাউন রামেসিস । কয়েকজন জ্যোতিষী গণনা করে রামেসিসকে বলেছিলেন ইহুদি পরিবারের মধ্যে এমন এক সন্তান জন্মগ্রহণ করবে যে ভবিষ্যতে মিসরের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে । তাই ফেরাউন আদেশ দিলেন কোনো ইহুদি পরিবারে সন্তান জন্মগ্রহণ করলেই যেন তাকে হত্যা করা হয়।আর তার ফলেই শিশু মুসা জন্মের পর মা জোশিবেদ সকলের চোখের আড়ালে সম্পূর্ণ গোপনে শিশুসন্তানকে বড় করে তুলতে লাগলেন । এভাবে তিন মাস যাওয়ার পর সন্তানকে গোপন রাখা আর সম্ভব হচ্ছিল না তখন আমরাম এবং জোশিবেদ শিশু মুসাকে একটা ছোট ঝুড়িতে করে নীল নদে ভাসিয়ে দিল । নদীর পাড় ধরে শিশুবাহী ঝুড়িটিকে অনুসরণ করে চললেন মুসা বোন মিরিয়াম । ঝুড়িটি গিয়ে পৌছল এমন একটি ঘাটে যেখানে ফারাও রাজকন্যা বাত্য Batya স্নান করছিলেন । ফুটফুটে সুন্দর একটা বাচ্চাকে একা পড়ে থাকতে দেখে তার মনে মায়া হলো । বাত্য শিশু মুসা’কে তুলে নিয়ে এলো রাজপ্রাসাদে । সেটা দেখতে পেল মিরিয়াম । মিরিয়াম রাজকণ্যার কাছে গিয়ে জানতে চাইলো বাচ্চাটার লালন পালনের জন্য তার কোন হিব্রু মহিলা প্রয়োজন হবে কিনা রাজকন্যা বাত্য সম্মত হলে জোশিবেদকেই মুসার ধাত্রী হিসেবে নিযু্ক্ত হল । নিজের পরিচয় গোপন করে রাজপ্রাসাদে মুসাকে দেখাশোনা করতে থাকে জোশিবেদ । ফারাও রাজ প্রাসাদে বড় হতে থাকেন মুসা (আঃ) ।
আল্লাহ্ তাআলা সূরা আল কাসাসের ৭ নম্বর আয়াতে বলেনঃ
আমি মূসা-জননীকে আদেশ পাঠালাম যে, তাকে স্তন্য দান করতে থাক। অতঃপর যখন তুমি তার সম্পর্কে বিপদের আশঙ্কা কর, তখন তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ কর এবং ভয় করো না, দুঃখও করো না। আমি অবশ্যই তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে পয়গম্বরগণের একজন করব।
হযরত মূসা (আঃ) দেখতে ছিলেন অত্যন্ত সুন্দর। ফেরাউনের কোনও পুত্র সন্তান ছিলো না, শুধু একটি কন্যা সন্তান ছিলো পরবর্তীতে যে ফেরাউনের সিংহাসনের বসেন। শিশু দর্শনে সবার মন স্নেহসিক্ত হয়ে উঠে। বিশেষ করে, ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়ার কোমল অন্তর মাতৃস্নেহে বিগলিত হয়। বিষয়টি ফেরাউনকে অবহিত করা হলে তিনি শিশুটিকে মেরে ফেরার নির্দেশ দেন, কিন্তু এতে স্ত্রী আসিয়া বাধ দেয়।
আল্লাহু তাআলা কোরআনের সূরা আল কাসাসের ৯ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করেনঃ
ফেরাউনের স্ত্রী বলল, এ শিশু আমার ও তোমার নয়নমণি, তাকে হত্যা করো না। এ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে পুত্র করে নিতে পারি।
শিশু মূসা যখন কোন ধাত্রীরই স্তন পান করছে না। বিষয়টি ফেরাউন স্ত্রী আসিয়াকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলে। অবশেষে মূসার ভগিনী যে গোপনে সমস্ত ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছিল সে এসে আবেদন জানায় যে আমি এমন একজন মহিলার কথা জানি যার স্তন এই শিশু পান করতে পারে। সেই মহিলাটিকে হাজির করতে তাকে আদেশ দেয়া হয়। অতঃপর সে নিজ মাতা অর্থাৎ মূসার জননীকে সবার সামনে উপস্থিত করে। স্তন দেয়া হলপর মূসা নির্বিঘ্নে দুগ্ধ পান করতে থাকেন। এ ঘটনায় সবাই বিস্ময়াভিভূত হয়। উম্মে মূসাকে রাজপরিবারের অবস্থান করার অণুমতি প্রদান করা হল। কিন্তু তিনি সেখানে থাকতে অস্বীকার করেন এবং বলেন যে তার স্বীয় স্বামী-পুত্র-কন্যা-পরিবার রয়েছে। অবশেষে কিছু শর্তসাপেক্ষে তাকে শিশুসহ নিজ গৃহে অবস্থান করার অণুমোদন দেয়া হয়। উম্মে মূসা অত্যন্ত প্রফুল্ল চিত্তে স্বীয় পুত্র শিশু মূসাকে নিয়ে নিজগৃহে প্রত্যাবর্তন করে।
আল্লাহু তাআলা সূরা আল কাসাসের ১৩ নম্বর আয়াতে বলেনঃ
অতঃপর আমি তাকে জননীর কাছে ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চক্ষু জুড়ায় এবং তিনি দুঃখ না করেন এবং যাতে তিনি জানেন যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য, কিন্তু অনেক মানুষ তা জানে না।
একদিন মূসা যখন নগরীতে প্রবেশ করলো সম্ভবত তা ছিল মধ্যাহ্ন কাল যখন মিশরের ব্যবসা বাণিজ্য কিছুহ্মণের জন্য বন্ধ থাকে। অথবা সময় কালটি ছিল রাত্রিকাল যখন শহরের আধিবাসীরা সুপ্তির কোলে আশ্রয় গ্রহণ করে। সূরা আল কাসাসের ১৮ নম্বর আয়াতের বর্ণনা অণুসারে শেষের বর্ণনাটিই অধিক প্রযোজ্য মনে হয়। নগরীতে প্রবেশ করে তিনি দুই ব্যক্তিকে লড়াই করতে দেখলেন। তাদের একজন ছিল তার নিজ ইহুদি দলের এবং অন্যজন তার শত্রু মিশরবাসী দলের। মূসার উদ্দেশ্য ছিল মিশরবাসীকে আঘাত করে ইহুদীকে মুক্ত করার। কিন্তু ঘটনা চক্রে মিশরবাসীটি মূসার এক ঘুষিতেই মৃত্যুবরণ করে। তিনি এতে দুঃখিত এবং অণুতপ্ত হয়ে পড়েন এবং আল্লাহুর নিকট হ্মমা প্রার্থনা করেন এবং আল্লাহ তাকে ক্ষমা করলেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে তিনি ভবিষ্যতে কখনও অপরাধীদের সাহায্য করবেন না। পরের দিন মূসা যখন ভীত শঙ্কিত অবস্থায় সে নগরীতে প্রবেশ করেন।তিনি দেখতে পারলেন যে গতকাল যে ব্যক্তি তার সাহায্য চেয়েছিল সে চিৎকার করে তার সাহায্য প্রার্থনা করছে। কিন্তু মূসা তাকে সাহায্যের জন্য আগ্রহ বোধ করলেন না কারণ তিনি আল্লাহুর নিকট প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি ভবিষ্যতে কখনও অপরাধীদের সাহায্য করবেন না। মূসা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ বোধ করেন। তিনি আবার ধারণা করলেন যে মিশরবাসীটিই অন্যায়ভাবে ইহুদিটিকে মারধর করছে তিনি ব্যাপারটিতে হস্তহ্মেপ করতে পুণরায় মনস্ত করলেন। উভয়ের শত্রু অর্থাৎ মূসা এবং ইহুদিটির শত্রু মিশরবাসীটি। মিশরবাসীসীটি পূর্বের সম্পূর্ণ ঘটনাটি অবগত ছিল। তখন সে বলল গতকাল তুমি যেভাবে এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে সে রকম আমাকেও কি হত্যা করতে চাও ? তুমি তো একজন স্বেচ্ছাচারী বই আর কিছু নও। আর তুমি সর্বদা ন্যায়ের এবং শামিতর কথা বল। যদি তুমি সত্যবাদী হও তবে পৃথিবীতে শামিত স্থাপন করবে। মিশরবাসীকে হত্যার গুজব চর্তুদ্দিকে রটনা হয়েছিল যা শেষ পর্যন্ত রাজপ্রাসাদেও পৌছে যায়। সেখানে ফেরাউনের সভাসদেশ্যবর্গের সভাতে মূসার জন্য মৃত্যুদন্ডের আদেশ ধার্য করা হয়।
সূরা আল কাসাসের ১৮ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করেনঃ
অতঃপর তিনি প্রভাতে উঠলেন সে শহরে ভীত-শঙ্কিত অবস্থায়। হঠাৎ তিনি দেখলেন, গতকল্য যে ব্যক্তি তার সাহায্য চেয়েছিল, সে চিৎকার করে তার সাহায্য প্রার্থনা করছে। মূসা তাকে বললেন, তুমি তো একজন প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট ব্যক্তি।
মূসা উপলব্ধি করতে পারলেন যে রাজপ্রাসাদ বা নগরী এমনকি ফেরাউনের রাজত্বের সীমানার মধ্যে তার জীবন নিরাপদ নয়। সুতরাং তিনি স্বেচ্ছায় নির্বাসনের মনস্ত করলেন। কিন্তু কোথায় যাবেন জানেন না। প্রচন্ড মানসিক উদ্বেগ ও উত্তেজনা তাকে অস্থির করে তোলে। তিনি একান্তভাবে সেই পরম করুণাময়ের নিকট প্রার্থনা করেন যার ফলে তিনি শামিত লাভ করেন এবং উদ্বেগ থেকে মুক্ত হন। অতঃপর তিনি মাদইয়ান দিকে যাত্রা শুরু করেন এবং যাত্রার পূর্বে আল্লাহুর নিকট অণুগ্রহ প্রার্থনা করেন। তফসীরকারগণ বর্ণনা করেন এই সফরে মূসা (আঃ) এর সাথে খাদ্য ছিল বৃহ্মপত্র। হযরত ইবনে আব্বাস বলেন এটা ছিল মূসা (আঃ) এর সর্বপ্রথম পরীহ্মা।
তার পরীহ্মাসমহের বিবরণ কোরআনের ২০ নম্বর সূরা আত ত্বোয়া-হা -তে বর্ণিত হয়েছে।
মাদইয়ান এর ঘটনাবলীঃ
প্রাচীন কালে যারা মরুভূমি অতিক্রম করতেন তদের যাত্রাপথে একমাত্র উদ্দেশ্য থাকত নির্দিষ্ট লহ্ম্যে পৌঁছানোর জন্য পথের মরূদ্যান বা কূপের নিকট পৌছানো। কারন তা হলে গাছের ছায়াতে সূর্যের প্রচন্ড তাপ থেকে শরীরকে সুশীতল করা কূপের পানি প্রচন্ড তৃষ্ণাকে নিবারন করা যায় ।সর্বোপারি মরুভূমির জনশূন্যতা থেকে রহ্মা পেয়ে মানুষের সঙ্গ লাভ করা যায়।মুসা শেষ পর্যন্ত মাদইয়ানের একটি মরূদ্যানে পৌছাতে সহ্মম হলেন কিন্তু তিনি ছিলেন পথশ্রমে ক্লান্ত এবং তৃষ্ণার্থ, সুতরাং স্বাভাবিকভাবে তিনি পানি পান করার জন্য আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু কুপে তখন একদল রাখাল তাদের জন্তুদের পানি পান করাচ্ছিল। সে সময়ে তিনি লহ্ম্য করেন যে দুজন রমণীদ্বয় তাদের পশুপালকে আগলিয়ে রেখেছে তাদের পশুদের পানি পান করানোর জন্য। তখন মূসা (আঃ)রমণীদ্বয়কে জিজ্ঞেস করলেন তোমাদের কি ব্যাপার ? তোমরা তোমাদের পশুপালকে আগলিয়ে দাড়িয়ে আছ কেন ? অন্যদের ন্যায় কূপের কাছে এনে পানি পান করাও না কেন ? তারা জবাব দিলো আমাদের অভ্যাস এই যে আমরা পুরুষের সাথে মেলামেশা থেকে আত্মরহ্মার জন্য পশুপালগুলোকে পানি পান করাই না যে পর্যন্ত তারা কূপের কাছে থাকে। তারা চলে গেলে আমরা পশুপালগুলোকে পানি পান করাই। রমণীদ্বয় এটাও বললেন যে আমাদের পিতা অতিশয় বৃদ্ধ। তিনি একাজ করতে পারেন না। তাই আমরা করতে বাধ্য হয়েছি। অতঃপর মূসা (আঃ) রমণীদ্বয়ের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে কূপ থেকে পানি তুলে তাদের পশুপালগুলোকে পান করিয়েছিলেন। কোন কোন রেওয়ায়েতে আছে যে রাখালদের অভ্যাস ছিল তারা জন্তুদেরকে পানি পান করানোর পরে একটি ভারী পাথর দ্বারা কূপের মুখ বন্ধ করে দিত। ফলে রমণীদ্বয় তাদের উচ্ছিত পানি পান করাত। এই ভারী পাথরটি দশ জনে মিলে স্থানান্তরিত করত। কিন্তু মূসা (আঃ) একাকী পাথরটি সরিয়ে দেন এবং কূপ থেকে পানি উত্তোলন করেন। সম্ভবত সে কারণেই রমণীদ্বয়ের একজন মূসা (আঃ) সম্পর্কে পিতার কাছে বলেছিলে যে মূসা (আঃ) শক্তিশালী। মূসা (আঃ) সাত দিন থেকে কোনকিছু আহার করেননি। তখন এক বৃহ্মের ছায়ায় এসে আল্লাহু তাআলার সামনে নিজের অবস্থা এবং অভাব পেশ করলেন। এটা দোয়া করার একটা সূহ্ম পদ্ধতি। রমণীদ্বয় নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই বাড়ি পৌছে গেলে বৃদ্ধ পিতা এর কারন জানতে চাইলেন । কন্যাদ্বয় ঘটনা খুলে বলল। পিতা দেখলেন লোকটি অণুগ্রহ করেছেন তাকে এর প্রতিদান দেওয়া উচিত। তাই তিনি কন্যাদ্বয়ের একজনকে মূসা (আঃ) কে ডেকে আনার জন্যে বললেন । মূসা (আঃ)যখন সবেমাত্র বিশ্রাম নিচ্ছিলেন সে সময় বালিকাটি লজ্জাজড়িত পদক্ষেপে সেখানে পৌছল। এতেও ইঙ্গিত আছে যে পর্দার নিয়মিত বিধানাবলী অবতীর্ণ না হওয়া সত্ত্বেও সর্তী রমণীগণ পুরুষের সাথে বিনাদ্বিধায় কথাবার্তা বলত না। প্রয়োজনবশতঃ সেখানে পৌছে বালিকাটি লজ্জা সহকারে কথা বলেছেন। বালিকাটি বণীতভাবে বললেনঃ আপনি আমাদের জন্য যা করেছেন তার জন্য আমার পিতা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্য এবং পারিশ্রমিক দেবার জন্য ডেকেছেন। তাফসীরে আরোও বলা হয়েছে যে মূসা (আঃ) তার সাথে পথ চলার সময় বললেন তুমি আমার পশ্চাতে চল এবং রাস্তা বলে দাও। বলাবাহুল্য যে বালিকাটি প্রতি দৃষ্টিপাত থেকে বেঁচে থাকাই ছিল এর লহ্ম্য। সম্ভবতঃ এই কারনেই বালিকাটি তার সম্পর্কে পিতার কাছে বিশ্বস্ততার সাহ্ম্য দিয়েছিলেন। সেই বালিকাদ্বয়ের পিতা কে ছিলেন এ সম্পর্কে তফসীরকারকগণ মতভেদ করেছেন। কিন্তু কোরআনের আয়াতসমূহ থেকে বাহ্যতঃ এ কথাই বোঝা যায় যে তিনি ছিলেন হযরত শোয়ায়ব (আঃ)।
বৃদ্ধ পিতা এবং মূসা দেখা মাত্র বন্ধুতে পরিণত হয়ে যায়। মূসা তাকে তার জীবন কাহিনী বিবৃত করেন তিনি কে ছিলেন কিভাবে তিনি এখানে এলেন কি পরিপ্রেহ্মিতে তিনি জন্মভূমি মিশর ত্যাগে বাধ্য হন তার সকল ঘটনা পূর্ণ বিবরণ তিনি রমণীদ্বয়ের বৃদ্ধ পিতা বর্ণনা করেন। সম্ভবত তাদের সাথে রমণীদ্বয়রাও এই কাহিনী শ্রবণের অংশগ্রহণ করে ছিলেন। রমণীদ্বয়ের এক জন্য তার পিতার নিকট আরয় করল গৃহের কাজের জন্য আপনার একজন চাকরের প্রয়োজন আছে। আপনি তাকে নিযুক্ত করুন। বালিকাদ্বয়ের পিতা হযরত শোয়ায়ব (আঃ) নিজেই নিজের পহ্ম থেকে কন্যাকে হযরত মূসার (আঃ) বিবাহে দান করার ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন। তার প্রস্তাব ছিল মূসা তার যে কোন একটি কন্যাকে বিবাহ করতে পারে বিনিময়ে, তাকে কমপহ্মে আট বছর তার পশুচারণের কাজজ করতে হবে। অবশ্য তুমি ইচ্ছা করলে দশ বছরও থাকতে পার।
সূরা আল কাসাসের ২৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহু তা'আলা উল্লেখ করেনঃ
মূসা বললেন, আমার ও আপনার মধ্যে এই চুক্তি স্থির হল। দু’টি মেয়াদের মধ্য থেকে যে কোন একটি পূর্ণ করলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকবে না। আমরা যা বলছি, তাতে আল্লাহর উপর ভরসা।
অতপর মাদইয়ান ত্যাগ এর ঘটনাবলীঃ
যখন হযরত মূসা (আঃ) দশ বছর পূর্ণ করলেন তখন হযরত শোয়ায়ব (আঃ) এর কাছে আরয় করলেনঃ এখন আমি জননী ও ভগ্নির সাথে সাহ্মাতের উদ্দেশে মিসর যেতে চাই। ফেরাউনের সিপাহীরা তাকে গ্রেফতার এবং হত্যার জন্যে খোঁজ করছিল। সে আশঙ্কার কারণেই তিনি মিসর ত্যাগ করেছিলেন। দীর্ঘদিন অতীবাহিত হওয়ার ফলে এখন সে আশঙ্কা অবশিষ্ট নেই। শোয়ায়ব (আঃ) তাকে স্ত্রী অর্থাৎ নিজের কন্যাসহ কিছু অর্থকড়ি এবং আসবাবপত্র দিয়ে বিদায় দিলেন। পথিমধ্যে শাম অঞ্চলের শাসকদের পহ্ম থেকে বিপদাশঙ্কা ছিল তাই তিনি পরিচিত পথ ছেড়ে অখ্যাত পথ অবলম্বন করলেন। তখন ছিল শীতকাল। স্ত্রী ছিলেন অস্তঃসত্তা এবং তার প্রসবকাল ছিল নিকটবর্তী। সকাল বিকাল যে কোন সময় প্রসবের সম্ভাবনা ছিল। রাস্তা ছিল অপরিচিত। তাই তিনি মরু অঞ্চলে পথ হারিয়ে তূর পর্বতের পশ্চিমে এবং ডান দিকে চলে গেলেন। গভীর অন্ধকার। কনকনে শীত। বরফসিক্ত মাটি। এ দুর্যোগ-মুহূর্তে স্ত্রীর প্রসব বেদনা শুরু হয়ে গেল। মূসা (আঃ) শীতের কবল থেকে আত্মরহ্মার্থে আগুন জ্বালাতে চাইলেন। কিন্তু তিনি আগুন জ্বালাতে ব্যর্থ হলেন। হঠাৎ তিনি তূর পর্বতে আগুন দেখতে পেলেন। সেটা ছিল প্রকৃতপহ্মে নূর। তিনি পরিবারবর্গকে বললেন তোমরা এখানেই অবস্থান কর। আমি আগুন দেখেছি। সম্ভবত আগুনের কাছে কোন পথপ্রদর্শক ব্যক্তিও পেতে পারি যার কাছ থেকে পথের সন্ধান জানতে পারব। পরিবারবর্গের মধ্যে স্ত্রী যে ছিলেন তা তো সুনিশ্চিত। কোন কোন রেওয়ায়েত থেকে জানা যায় যে কোন খাদেমও সাথে ছিল। তাকে উদ্দেশ করেও সম্বোধন করা হয়েছে। আবার কোন কোন রেওয়ায়েত আছে যে কিছুসংখ্যক লোক সফর সঙ্গীও ছিল কিন্তু পথ ভুলে তিনি তাদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
সিনাই পর্বত, এই স্থানেই মূসা প্রথম আল্লাহ বা ইসলাম ধর্ম অণুযায়ী ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলেছিলেন।
মূসা (আঃ) এর নবুওয়ত লাভ
মূসা (আঃ) পাহাড়ের পাদদেশে এই ঘটনার সম্মুখীন হন। পাহাড়টি ছিল তার ডানদিকে। এই উপত্যকার নাম ছিল তুয়া। যখন তিনি আগুনের কাছে পৌঁছালেন মুসনাদে-আহ্মদে ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বেহ্ বর্ণনা করন যে মূসা (আঃ) আগুনের কাছে পৌঁছে একটি বিস্ময়কর দৃশ্য দখতে পেলেন। তিনি দেখলেন যে এটি একটি বিরাট আগুন যা একটি সতেজ ও সবুজ বৃহ্মের উপর দাউ দাউ করে জ্বলছে কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে এর কারণে বৃহ্মের কোন ডাল অথবা পাতা পুড়ছে না বরং আগুনের কারণে বৃহ্মের সৌন্দর্য সজীবতা ও উজ্জ্বল্য আরও বেড়ে গেছে। মূসা (আঃ) এই বিস্ময়কর দৃশ্য কিছুহ্মণ পর্যন্ত দেখতে থাকলেন এবং অপেহ্মা করলেন যে আগুনের কোন স্ফুলিঙ্গ মাটিতে পড়লে তিনি তা তুলে নেবেন। অনেকহ্মণ অতীবাহিত হওয়ার পরও যখন এমন হল না তখন তিনি কিছু ঘাস ও খড়কুটা একত্রিত করে আগুনের কাছে ধরলেন। বলাবাহুল্য, এতে আগুন লেগে গেলেও তার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে। কিন্তু এগুলো আগুনের কাছে নিতেই আগুন পেছনে সরে গেল। কোন কোন রেওয়ায়েত আছে, আগুন তার দিকে অগ্রসর হল। তিনি অস্থির হয়ে পেছনে সরে গেলেন। মোটকথা আগুন লাভ করার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হল না। তিনি এই অত্যাশ্চর্য আগুনের প্রভাবে বিস্ময়াভিভূত ছিলেন ইতিমধ্যে একটি গায়বী আওয়াজ হল।
বাহ্রে-মুহীত, রূহুল-মা'আনী ইত্যাদি গ্রন্থে আছে, হযরত মূসা (আঃ) এই গায়বী আওয়াজ চতুর্দিক থেকে সমভাবে শ্রবণ করেন। তার কোন দিক নির্দিষ্ট ছিল না। শুনেছেনও অপরূপ ভঙ্গিতে শুধু কানে নয় সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্বারা শুনেছেন। এটা ছিল একটা মু'জেযার মতই। আওয়াজের সারমর্ম ছিল এই যে,, ‘’যে বস্তুকে তুমি আগুন মনে করছ, তা আগুন নয় আল্লাহ্ তাআলার জ্যোতি। এতে বলা হয়, আমিই তোমার পালনকর্তা’’। রূহুল-মা'আনী মুসনাদে বরাতে ওয়াহাবের রেওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে যে মূসা (আঃ) কে যখন 'ইয়া মূসা' শব্দ প্রয়োগে আওয়াজ দেয়া হয়, তখন তিনি 'লাব্বায়েক' (হাজির আছি) বলে জওয়াব দেন এবং বলেন যে, আমি আওয়াজ শুনছি। কিন্তু কোথা থেকে আওয়াজ দিচ্ছেন, তা জানি না। আপনি কোথায় আছেন ? উত্তরে বলা হলঃ আমি তোমার উপরে, সামনে, পশ্চাতে ও তোমার সাথে আছি। অতঃপর মূসা (আঃ) আরয করলেন আমি স্বয়ং আপনার কালাম শুনেছি, না আপনার প্রেরিত কোন ফেরেশতার কথা শুনেছি ? জওয়াব হলঃ আমি নিজেই তোমার সাথে কথা বলছি।
সূরা আত ত্বোয়া-হা -এর ১২ নম্বর আয়াতে আল্লাহু তাআলা উল্লেখ করেনঃ
আমিই তোমার পালনকর্তা, অতএব তুমি জুতা খুলে ফেল, তুমি পবিত্র উপত্যকা তুয়ায় রয়েছ।
জুতা খোলার নির্দেশ দেয়ার এক কারণ এই যে স্থানটি ছিল সম্ভ্রম প্রদর্শনের এবং জুতা খুলে ফেলা তার অন্যতম আদব। দ্বিতীয় কারণ এই যে কোন কোন রেওয়ায়তে থেকে জানা যায় মূসা (আঃ) এর পাদুকাদ্বয় ছিল মৃত জন্তুর চর্মনির্মিত। হযরত আলি হাসান বসরী ও ইবনে জুরায়জ থেকে প্রথমোক্ত কারণই বর্ণিত আছে। তাদের মতে মূসা (আঃ) এর পদদ্বয় এই পবিত্র উপত্যকার মাটি স্পর্শ করে বরকত হাসিল করুক এটাই ছিল জুতা খুলে রাখার উপকারিতা। হাদীসে রয়েছে, রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বশীর ইবনে খাসাসিয়াকে কবরস্থানে জুতা পায়ে হাঁটতে দেখে বলেছিলেন,
''তুমি যখন এ জাতীয় সম্মানযোগ্য স্থানে অতিক্রম কর, তখন জুতা খুলে নাও।''
সূরা আত ত্বোয়া-হা -এর ১৪ থেকে ১৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা হযরত মূসা (আঃ) কে ধর্মের সমুদয় মূলনীতি শিহ্মা দেয়া হয়েছে; আর্থাৎ তাওহিদ, রেসালাত ও পরকাল; এবং তিনি বলেছেন,
আমিই আল্লাহ আমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম কর। কেয়ামত অবশ্যই আসবে, আমি তা গোপন রাখতে চাই; যাতে প্রত্যেকেই তার কর্মানুযায়ী ফল লাভ করে। সুতরাং যে ব্যক্তি কেয়ামতে বিশ্বাস রাখে না এবং নিজ খাহেশের অণুসরণ করে, সে যেন তোমাকে তা থেকে নিবৃত্ত না করে। নিবৃত্ত হলে তুমি ধবংসি ধবংস হয়ে যাবে।
এখানে নামাযের নির্দেশে করা হয়েছে। কিন্তু নামাযকে পৃথকভবে উল্লেখ করার কারণ এই যে নামায সমস্ত এবাদতের সেরা এবাদত। হাদীসের বর্ণনা অণুযায়ী নামায ধর্মের স্তম্ভ, ঈমানের নূর এবং নাময বর্জন কাফেরদের আলামত। কেয়ামতের ব্যাপারটি আল্লাহ্ তাআলা সব সৃষ্টজীবের কাছ থেকে গোপন রেখেছেন এমনকি পয়গম্বর ও ফেরেশ্তাতাদের কাছ থেকেও। হযরত মূসা (আঃ) কে লহ্ম্য করে সতর্ক করা হয়েছে যে তুমি কাফের ও বেঈমানদের কথায় কেয়ামত সম্পর্কে অসাবধানতার পথ বেছে নিয়ো না তাহলে তা তোমার ধ্বংসের কারণ হয়ে যাবে।
অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা বললেনঃ তোমার ডান হাতে ওটা কি? মূসা (আঃ) বললেনঃ এটা আমার লাঠি। আমি এর উপর ভর দেই। এর দ্বারা আঘাত করে আমার ছাগপালের জন্যে বৃহ্মপত্র ঝেড়ে ফেলি এবং এর দ্বারা আমার অন্যান্য কাজও উদ্ধার হয়। আল্লাহ্ তাআলা বললেনঃ একে মাটিতে নিহ্মেপ কর। মূসা (আঃ) আল্লাহ্ তাআলা নির্দেশে তা মাটিতে নিহ্মেপ করার পর তা সাপে পরিনত হলো এবং নড়াচড়া করতে লাগলো। এই সাপ সম্পর্কে কোরআন পাকের এক জায়গায় ছোট ও সরু সাপ বলা হয়েছে। অন্য জায়গায় একে অজগর ও বৃহৎ মোটা সাপ বলা হয়েছে। সম্ভবতঃ এটি যেখানে যে রূপ আকৃতি ধারণের প্রয়োজন হতো সে রূপ ধারণের আকৃতি ধারণ করতে সহ্মম ছিল। ইমাম কুরতুবীর বর্ণনা অণুযায়ী এটি চিকন সাপের ন্যায় দ্রুতগতি সম্পন্ন ছিল বলে 'জান্নুন' বলা হতো। লোকেরা দেখে ভীষণভাবে ভীত হতো বলে 'ছওবানুন' বলা হতো। অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা বললেনঃ এখন তোমার লাঠিটি হতে নেয়, ভয় করনো না। আমি একে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেব। হযরত মূসা (আঃ) দেওয়া আল্লাহ্ তাআলার দ্বিতীয় মু'জেযা হল তার উজ্জ্বল হাত। ইবনে-আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে আল্লাহ্ তাআলা বললেনঃ তোমার হাত বগলের নীচ রেখে যখন বের করবে, তখন তা সূর্যের ন্যায় ঝলমল করতে থাকবে।স্বীয় রসূলকে দু'টি বিরাট মু'জেযার অস্ত্র দ্বারা সুসজ্জিত করার পর আদেশ করা হয়েছে যে, এখন উদ্ধত ফেরাউনকে ঈমানের দাওয়াত দেয়ার জন্যে চলে যাও
0 responses to “ হযরত মূসা (আ.) এর জীবন কাহিনী ”