সবাই কেমন আছেন। আশা করি সবাই ভালো আছেন।আমিও অনেক ভালো আছি।
|| আজকের টপিক ||
তো আজ আমি আপনাদের সাথে হযরত আদম আ. এর সংক্ষিপ কাহিনি বলবো।। চলুন শুরু করা যাক।।। ||| লেখক আমি মোঃ মোকলেছুর রহমান ||| হযরত আদম (আঃ) হলেন মানব জাতির পিতা । উনাকে আল্লাহতায়ালা প্রথম সৃষ্টি করেন । তারপর উনার সঙ্গী মা হওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করেন । কুরআন ও হাদীসে আদম (আঃ) এর সৃষ্টি সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানতে পারি ।
আবু আশআরী (রাঃ) বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা আদম (আঃ) কে পৃথিবী থেকে সংগৃহীত এক মুঠো মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেন ।
তাই মাটি অনুপাতে আদম সন্তানদের কেউ হয় সাদা, কেউ হয় গৈারবর্ণ, কেউ হয় কালো, কেউ হয় মাঝামাঝি । ঈষৎ শাব্দিক পার্থক্যসহ তিনি ভিন্ন সূত্রে উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ।
সুদ্দী (রঃ) ইবন আব্বাস ও ইবন মাসউদ (রা) সহ কতিপয় সাহাবা সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তারা বলেনঃ আল্লাহতায়ালা কিছু কাদামাটি নেয়ার জন্য জিব্রাঈল (আ) কে যমীনে প্রেরণ করেন । তিনি এসে মাটি নিতে চাইলে যমীন বলল, তুমি আমার অঙ্গ হানি করবে বা আমাতে খুত সৃষ্টি করবে ; এ ব্যাপারে তোমার নিকট থেকে আমি আল্লাহর কাছে পানাহ চাই । ফলে জীব্রাঈল (আঃ) মাটি না নিয়ে ফিরে গিয়ে বললেন, হে আমার রব ! যমীন তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করায় আমি তাকে ছেড়ে এসেছি ।
এবার আল্লাহতায়ালা মীকাঈল (আ) কে প্রেরণ করেন । যমীন তার নিকট থেকেও আশ্রয় প্রার্থনা করে বসে । তাই তিনিও ফিরে গিয়ে জিব্রাঈল (আ) এর মতই বণনা দেন । এবার আল্লাহতায়ালা মালাকুল মউত বা আযরাঈল (আ) কে প্রেরণ করেন । যমীন তার কাছ থেকেও আশ্রয় প্রার্থনা করলে তিনি বললেন, আর আমিও আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন না করে শূন্য হাতে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে তার পানাহ চাই । এ কথা বলে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন স্হান থেকে সাদা, লাল ও কালো রঙের কিছু মাটি সংগ্রহ করে মিশিয়ে নিয়ে চলে যান । এ কারণেই আদম (আঃ) এর সন্তানদের এক একজনের রঙ এক এক রকম হয়ে থাকে ।
আজরাঈল (আঃ) মাটি নিয়ে উপস্হিত হলে আল্লাহতায়ালা মাটি গুলো ভিজিয়ে নেন । এতে তা আঠালো হয়ে যায় । তারপর আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেনঃ
"কাদা মাটি দ্বারা আমি মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছি । যখন আমি তাকে সুঠাম করব এবং তাতে আমার রুহ সন্চার করব ; তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ো । "(১৫/২৮)
তারপর আল্লাহতায়ালা আদম (আঃ) কে নিজ কুদরতি হাতে সৃষ্টি করেন যাতে ইবলিশ অহংকার করতে না পারে । তারপর মাটির তৈরী এ মানব দেহটি আল্লাহ চল্লিশ দিন রূহ প্রদান ব্যতীত ফেলে রাখে । তখন এই দেহটির প্রতি লক্ষ্য করে ফেরেশ্তারা এবং ইবলিশ ঘুরাঘুরি করত । আর আল্লাহর সৃস্টিকে বুঝার চেষ্টা করত । ইবলিশ আদম (আঃ) এর প্রাণহীন দেহটিকে আঘাত করলে তা ঠন ঠন আওয়াজ করে । সে দেহটির চারপাশে ঘুরে বলত , তুমি একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি হয়েছ ।
এরপর তার মধ্যে রূহ সন্চার করার সময় এলে আল্লাহতায়ালা বললেনঃ আমি যখন এর মধ্যে রুহ সন্চার করব, তখন এর প্রতি সেজদাবনত হয়ো । যথাসময়ে আল্লাহতায়ালা আদম (আঃ) এর দেহে রুহ সন্চার করেন , তখন রুহ তার মাথার মধ্যে প্রবেশ করে এবং তিনি হাচি দেন । ফেরেশ্তারা বললেন, আপনি আল-হামদুলিল্লাহ বলুন । আদম (আঃ) আল-হামদু লিল্লাহ বললেন । জবাবে আল্লাহতায়ালা বললেন, তোমার রব তোমাকে রহম করুন । তারপর উনার দৃস্টি জান্নাতের ফল-ফলাদির দিকে গেল । তিনি উনার পেটে ক্ষুধা অনুভব করলেন এবং ফল-ফলাদি খাওয়ার আকাংখা মনে আসল এবং তা সেগুলো পাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি করে ছুটে যান । এ কারণেই আল্লাহতায়ালা বলেন,
'মানুষ সৃষ্টিগতভাবেই ত্বরাপ্রবণ ' (২১/৩৭)
সূরা সাদে আল্লাহতায়ালা বলেন,
" স্বরণ কর, তোমার প্রতিপালক ফেরেশ্তাদেরকে বলেছিলেন, আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি কাদা মাটি থেকে । যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার রূহ সন্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ে । তখন ফেরেশ্তারা সকলেই সিজদাবনত হলো - কেবল ইবলিশ ব্যতীত । সে অহংকার করল এবং কাফিরদের অর্ন্তভুক্ত হলো ।
তিনি বললেন, হে ইবলিশ ! আমি যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করলাম , তার প্রতি সিজদাবনত হতে তোমাকে কিসে বাধা দিল ? তুমি কি উদ্ধত প্রকাশ করলে না কি তুমি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ? সে বলল, আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ । আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃস্টি করেছেন কাদামাটি থেকে ।
তিনি বললেন, তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও । নিশ্চয়ই তুমি বিতাড়িত এবং তোমার উপর আমার লা'নৎ স্হায়ী হবে কর্মফল দিবস পর্যন্ত ।
সে বলল, আমার প্রতিপালক ! আপনি আমাকে অবকাশ দিন পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত । তিনি বললেন, তুমি অবকাশ প্রাপ্তদের অর্ন্তভুক্ত হলে - অবধারিত সময় উপস্হিত হওয়ার দিন পর্যন্ত । সে বলল- আপনার ক্ষমতার শপথ ! আমি তাদের সকলকেই পথভ্রষ্ট করব । তবে তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ বান্দাদেরকে নয় ।
আর তিনি বললেন, তবে এটাই সত্য - আর আমি সত্যই বলি - তোমার দ্বারা আর তোমার অনুসারীদের দ্বারা আমি জাহান্নাম পূর্ণ করবই । (৭১-৮৫)
সূরা আরাফে আল্লাহতায়ালা বললেন,
"সে বলল, আপনি আমাকে উদভ্রান্ত করলেন , এজন্য আমিও তোমার সরল পথে নিশ্চয়ই ওৎ পেতে বসে থাকব । তারপর আমি তাদের নিকট আসবই সম্মুখ, পশ্চাৎ, দক্ষিণ এবং বাম দিক থেকে এবং তুমি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞরূপে পাবে না ।"
সুদ্দী আবু সালিহ ও আবু মালিকের সূত্রে ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে এবং মুররা এর সূত্রে ইবন মাসউদ (রাঃ) ও কতিপয় সাহাবা থেকে বর্ণনা করেন যে, তারা বলেনঃ আল্লাহতায়ালা ইবলিশকে জান্নাত থেকে বের করে দেন । আদম (আঃ) তথায় নিঃসঙ্গ একাকী ঘুরে বেড়াতে থাকেন । এখানে তার স্ত্রী নেই যার কাছে গিয়ে একটু শান্তি লাভ করা যায় । এক সময় তিনি ঘুমিয়ে পড়েন । জাগ্রত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তার শিয়রে একজন নারী উপবিষ্ট রয়েছেন । আল্লাহতায়ালা তাকে আদম (আঃ) এর পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করেন । তাকে দেখে আদম (আঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কে ? তিনি বললেনঃ আমি একজন নারী । আদম (আঃ) বললেন, তোমাকে কেন সৃষ্টি করা হয়েছে ? জবাবে তিনি বললেন, যাতে আপনি আমার কাছে শান্তি পান । তখন ফেরেশ্তাগন আদম (আঃ) এর জ্ঞান যাচাই করার জন্য জিজ্ঞাসা কররেন, হে আদম ! উনার নাম কি বলুন তো ! আদম আঃ বললেন, হাওয়া । আবার তারা জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা হাওয়া নাম হলো কেন ? আদম (আঃ) বললেন, কারণ তাকে 'হাই' (জীবন্ত সত্তা) থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে ।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন,"হে মানব জাতি ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর,যিনি তোমাদেরকে এক ব্যাক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তা হতে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেনএবং তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন ।" (৪/১)
সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে যে, আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ 'মহিলাদের ব্যাপারে তোমরা আমার সদুপদেশ গ্রহণ কর । কেননা, নারীদেরকে পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে । আর পাজরের উপরের অংশটুকুই সর্বাধিক বাকা । যদি তুমি তা সোজা করতে যাও তাহলে ভেঙ্গে ফেলবে এবং আপন অবস্হায় ছেড়ে দিলে তা বাকাই থেকে যাবে । অতএব, মহিলাদের ব্যাপারে তোমরা আমার সদুপদেশ গ্রহণ কর "
সূত্রঃ আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া । আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসির আদ-দামেশ্কী (র)।
0 responses to “ || হযরত আদম (আ.) এর সংক্ষিপ জীবন কাহিনী || ”